1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

আহা, ফেলে আসা সেই অতীত।

  • Update Time : শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২০
  • ৫২৪ Time View

আজকের একটা ১৮ বছরের শহুরে ছেলে হয়তো জানবেই না ছাদে উঠে এলুমিনিয়ামের থালা বাটি লাগানো এন্টেনা নেড়ে নেড়ে কেন ভাইয়েরা চেঁচিয়ে নিচে টিভির সামনে বসা বোনদের, কোন গোপন সংবাদটা পাড়ার সবাইকে শুনিয়েই টেলিগ্রাফ করতো..
হইছেছ…হইছেছেছে..হয় নাইই ?
এইইই একটু হইছিলো, গেল গিয়া আবার …
ধুউউর, আমি আর পারুম না…

কিংবা জানেই না রোটারী ফোন ডায়াল করতে হলে রিসিভারটা হাতে তুলতে হয়, বলতে পারবে না টু ইন ওয়ানের ফিতা প্যাঁচালে কি করে খুলতে হয়, ক্যাসেটাই হয়তো চিনবে না। টাইপ রাইটার দেখে বুঝতে পারবে না এর হার্ড ড্রাইভটা আসলে নিজের মাথায়, ওটার usb port নেই দেখে অবাক হবে।

কতটা পথ পেরিয়ে এসেছি ভাবলে অবাক লাগে। রেডিও, এরপর ব্রিফকেসের মত দেখতে লং প্লে টার্নটেবিল, তারপর টু ইন ওয়ান, অতপর ওয়াকম্যানের পথে হেঁটে সিডি রাস্তার মোড়ে ipod কে দেখা দিয়ে আজকে সেল ফোনের গলিতে এসে থামলাম। আর ওদিকে, রোটারী ফোনে হ্যালো হ্যালো করতে করতে বিরক্ত হয়ে আজ স্মার্টফোনে sms এ নিশ্চুপ আমরা। টাইপ রাইটারের খটাখট শব্দের বদলে সোঁ সোঁ আওয়াজ তোলা ফ্যাক্স মেশিনের সাথে আড়ি নিয়ে ইমেইলের সাথে সন্ধি করেছি। সাদা কালো টিভিও না দেখা আমরা, রংগিনে এসে আরও চাই এর ভাবনায় বাড়ির ছাদে চড়ে রান্নার ডেকচি পাতিল এন্টেনার সাথে বেঁধে, চিৎকার করে, ‘হইছে…. হয় নাইইই… এখন হইছেছে’ , বলতে বলতে গলা নষ্ট করে ডিসের লাইনের সন্ধ্যন পেয়েও সন্তুষ্ট না হয়ে VCR, VCP, ক্যাবল সব বাদ দিয়ে ইউ টিউবকেই আপন ভাবলাম। লম্বা একটা পথ অজান্তেই পাড়ি দিলাম এক জনমে।

আহা, ফেলে আসা সেই অতীত।

১৯৭৩, ঢাকা, সাত মসজিদ রোড, ফিজিক্যাল কলেজ, মাত্র দুখানা দোকান। গফুর ভাইয়ের মুদি কাম চা আর ঝকমকে রুবী কনেফেকশনারী এন্ড জেনারেল স্টোর। ভিতরের ফকফকে আলো টিউব লাইটের। বড় লোকের বাড়িতেও দেখা যেত কম। বিস্তীর্ণ বিশাল তখন রাস্তাটা। এপার থেকে ওপারে যেতে মনে হতো কুবের মাঝি পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। আজকের মত সরু গলি নয় তখন। নো আইল্যান্ড ইন বিটুইন। মাঝে সাঝে গাড়ির দেখা মেলে। বাকি সময়টা অলস কাটে রাস্তাটার। সমসাময়িক বা বড় যারা, তাদের যদি ঐ পাড়ায় আসা যাওয়ার অভ্যেসের সাথে, স্মৃতিটা যদি বিদ্রোহ না করে থাকে, তাহলে মানস পটে হয়তো পুরনো দিনের সাদা কালো জীবন চিত্রের রীলটা চালু হয়ে গেছে এর মাঝেই। হয়তো ঝাপসা, কাঁপছে স্ক্রিনটা, নড়েছে ভিতরটা, তারপরও ওটাই আমাদের সিনেমা। ওর নায়ক নায়িকা আমরাই। কলা কুশলিরাও সব নিজেদেরই বন্ধু বান্ধব। সবাই মিলেই তৈরি করতাম আমরা একেকটা এপিসোড। লম্বা সিরিয়াল। আর্কাইভে সযত্নে আজও রাখা, সবার।

আর চালু না হলেও সমস্যা নেই। একি কাহিনী নিয়েই হাজারো সিনেমা আমার সম বয়সি সব ঢাকাবাসীর জীবনেই। ভিন্নতা শুধু পাত্র পাত্রীতে।
চলেন একটু ঘুরে দেখে আসি স্মৃতিরপটে ধুলোয় ঢাকা আমাদের শৈশব কৈশোরকে। ঘরেই তো বন্দি সবাই। ঘুরে আসলে খারাপ লাগবে না। তারপর না হয় বাকিরাও শোনাবেন তাদের কথাগুলো।
বাচ্চারা চাইলেও দেখতে পারো। তবে উল্টো পাল্টা কিছু করনো। মুরুব্বীরা অপছন্দ করেন এমন কিছু কিন্তু করা যাবে না কারন যে সময়ে ফিরে যাচ্ছি তখন কিন্তু আমরা তাদের সন্মান আর ভয় পেতাম। কে কোন বাবার ছেলে এটা মাথাতেও ঢুকতো না আমাদের। শুধু এটুকুই বুঝতাম, বাবার কানে যদি একবার কমপ্লেইন আসেতো খোদ জিবরাইল আঃ বাঁধা দিয়েও আজরাইলের পথ আটকাতে পারবে না। নাহ, তাই বলে বাচ্চারা ভেবে আমাদের শৈশব বোরিং ছিলো। ইনফ্যাক্ট আমরা যা করেছি বা দেখেছি, তোমরা তার ধারে কাছেও যাওনি। ঐ যে শুরুতে বললাম।

৮ বছরের একখানা বালক। মায়ের পানের বাটা থেকে ঘ্যানর ঘ্যানর করে অবশেষে দের টাকা পেয়ে, পঞ্চাশ পয়সায় আধা ঘন্টা সাইকেল ভাড়া করে মন ভরে চালিয়ে, ঘেমে নেয়ে ঝোল হয়ে রওনা হলো সেই রুবী কনেফেকশনারী দোকানটার দিকে। একটু পরিশ্রম হচ্ছে, কারন সাইকেলের চাকায় হাওয়া নেই। নেই মানে লীক শুরু থেকেই। হাওয়া দিতে আবার সেই কুড়ি পয়সা। সেটা খরচ করলে বালকের আসল মিশন সফল হবে না বলেই হাওয়া ছাড়াই চালাচ্ছে। নাহ, অভাবী ঘরের ছেলে নয়। বরং সোনার চামচ মুখে নিয়েই জন্মছে। বাড়িতে দুটো গাড়িও আছে। বলতে পারেন পকেট শূন্য কিন্তু ধনীর দুলাল। নিয়মটাই তখন তাই ছিল। টাকা পয়সা হাতে দিলেই সব শেষ এমন একটা ভাব। লাইট পোষ্টের সাথে সাইকেলটা রেখে একটাকা হাতে নিয়ে দোকানে ঢুকে, গুনে গুনে তিনটা ক্রীম বিস্কিট হাতে পেয়ে যেন দুনিয়ার রংটাই পাল্টে গেলো বালকের। তিন তিন খানা! তাও আবার একা নিজের। উফফ, অভাবনীয় কান্ড। ওরে, এতো তিন নয় রে, এতো ছয় হবে একটু পরেই। তার উপর বোনাস যে ক্রীমটা।
কার জানি পরীক্ষার খাতার পৃষ্ঠা দিয়ে বানানো ঠোংগাতে মুড়ে দ্বিতীয়বার ঠিকমত তিনটা দিলো কিনা চেক করে আবার সেই সাইকেল যাত্রা।
এখনো বহু কাজ বাকি। সাইকেল ফেরত দিতে হবে। সেখানে আবার ঐ একি লোককে থাকতে হবে। না হলে আবার লীকটা কি আগে ছিলো কি ছিলো না তার ভেজাল সামলাও। তারপর পথটুকু হেঁটে ফিরে আসা। বাকি ভাই বোনদের আড়াল করে চুপিসারে ছাদে ওঠা। মায়ের চোখে পরলে, ভর দুপুরের রোদে পুড়ে গায়ের রং আলকাতরা করার গোপন রহস্য ব্যাক্ষা করা। আসমত ভাইয়ের কড়া নিষেধ, “হচাঁ বিশকুট ইগিন কিললাই খানের। হ্যডে বিষ কইরবো য্যরে দি”। এটা যে অমৃত সেটা কি আর তিন বেলা ভাত খাওয়া ঐ মুরুব্বীকে বোঝানো সম্ভব!

 

চোরের মত আওয়াজ না করেই ছাদের পানির টাংকের ছায়ায় বসেই খুললাম রত্ন ভান্ডার। হাতে নিলাম একখানা। দেখলাম চেয়ে অপলক। কালি ঝুলি লাগা হাতেই আলতো ভাবে টান দিয়ে ১ দুগুনে দুই, নামতার প্রাকটিকাল করে ফেললাম। নাহ, এখনো কামড়ে খাবার সময় হয়নি। সবেতো প্রথম দৃশ্য। একটার সাথে ক্রীমের ভাব বেশি। তাকেই ধরে এবার পরম আনন্দ দাঁত দিয়ে আঁচড়েই ক্রীমটা প্রথম। সাবধান, বিস্কিটের গায়ে আঘাত যেন না লাগে। সার্জিক্যাল প্রিসিশনে শুধু ক্রীমটা আলাদা করছি আর গলা দিয়ে নামছে, সাথে আমি স্বর্গে আরোহন করছি। এরপর, কামড়ে বাকিটা। দ্বিতীয়টার সিস্টেম আলাদা। এটা এক বারে কামড়ে। বিলেতি সাহেবদের মত। আর সব শেষে ঐ, ৩ দুগুনে ছয় নাম্বারটা শেষ হয়ে যাবার ভয়ে ক্রীমটা আর দাঁতে আঁচড়ে নয়! চেটে চেটেই সাবাড় করলাম। ততক্ষণে বিস্কিট ভিজে নরম হয়ে সেই চায়ের কাপে ডোবালে তোলার আগেই টুপ করে ভেংগে পরে যেত সেই অবস্থা, আর আসে পাসে খুঁজেও চামচ পাবেন না তখন। বাকি অর্ধেকটা শেষ করে মুখ মুছে, নিচে নেমে এসে দেখি, ভাই বোনেরা কোথা থেকে যেন এক প্যাকেট নিয়ে বসছে ক্রীম বিস্কুট। কমলা রংয়ের প্যাকেটের গায়ে, হক অথবা নাবিক্সো নামটা আমার দিকে তাকিয়ে টিটকেরি মারছে। বালক, নিছকই তুমি এত কষ্ট করলে।

আমাদের শৈশবটা এমনই ছিলো। এখনকার মত অস্থির আর আতঙ্কে বড় হইনি আমরা। এপার্টমেন্ট কি জিনিস আমরা বুঝতাম না। বাড়ি চিনতাম আমরা। সেটা টিনের চালের হলেও বৃষ্টির যে স্বর্গীয় মূর্ছনা তার স্বাদ যে পায়নি, জীবনের একআনা তার অনাবৃতই থাকলো। আমরা পিজ্জা বার্গার আর চিকেন ড্রাম স্টিক দেখিনি, কিন্তু কালো রংয়ের টিনের বাক্সে ভিতরে লাইট বাল্ব দেওয়া হট প্যাটিস আর টং ঘরের শিংগারা খেয়েই এই পর্যন্ত অনায়াসে আসছি। আমরা সিনেম্যাক্স বা ফিউচার পার্কে ছবি দেখিনি, কিন্তু মার হাত ধরে দেরি করে হলে গিয়ে লাইট ম্যানের একটা টর্চ দিয়ে দুরে সিটটা দেখিয়ে দিলে ঠিকি অন্ধকারে খুঁজে পেয়েছি। পপকর্ন চাবাইনি কিন্তু বিরতিতে তেল তেল চিপসটা খেয়ে মার আঁচলটা নষ্ট করেছি। এলিফ্যান্ট রোড খেলনার দোকানে কাঁচ ভেদ তাকিয়ে দেখছি উড়োজাহাজ আর কল্পনায় আকাশে ডানা মেলেছি।
হয়নি, পাইনি, দেখিনি, খাইনি, সবটাতে ভরা হতে পারে, কিন্তু তাতে কি। কোনদিনই সেটা সাদাকালো নয় বরং ইন্দ্রেধনুর সবকটা রংয়ের অকৃপন ছোঁয়ায় কিন্তু আমাদের সাজানো ছেলেবেলা।

রিয়াজ রব্বানী। টরেন্টো, ২০২০
লেখক:রিয়াজ রব্বানী। টরেন্টো, ২০২০

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..